আমের গুণের নানা দিক



গ্রীষ্মকাল যেমন প্রচন্ড দাবদাহ নিয়ে আসে তেমনি নিয়ে আসে প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য্যের ভান্ডার। আম হচ্ছে গ্রীষ্মের সবচেয়ে উপাদেয় উপহার। এ সময় প্রচুর পরিমাণে আম পাওয়া যায়। আম খেতে যেমন ভালো তেমনি এর পুষ্টিগুণও অনেক। এজন্যই একে ‘ফলের রাজা’ বলা হয়ে থাকে। আম যে শুধু খেতেই সুস্বাদু তাও নয় এটি রূপচর্চার-ও কাজে লাগে। তবে আর দেরী কেন? চলুন জেনে নেই আমের গুণাগুণ সম্পর্কে -

স্বাস্থ্যকর দিকঃ

০১. ক্যান্সার প্রতিরোধঃ

আমরা সবাই জানি যে প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে ভালো আর ক্যান্সারের মত রোগ প্রতিরোধ করা তো অবশ্য কর্তব্য। গবেষণায় দেখা গিয়েছে আমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোলন, স্তন, লিউকোমিয়া ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আমে রয়ছে কেরোটিন, আইসো-কেরোটিন, এস্ট্রাগ্যালিন, ফিসেটিন, গ্যালিক এসিড, মিথাইল গ্যালাট এবং আরো অনেক রকম এনজাইম; যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

০২. কোলোস্টেরল কমানোঃ

আম হচ্ছে ফাইবার, পেকটিন ও ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। এসব উপাদানে রক্তে খারাপ কোলোস্টেরল তথা লো ডেনসিটি লিপো-প্রোটিন (এলডিএল) কম করে।

০৩. ত্বক পরিষ্কারকঃ

আমের খাদ্যগুণ ভেতর থেকে ত্বকের দ্যূতিময়তা ফিরিয়ে আনে এবং ময়লয়া পরিষ্কার করে ত্বকে আনে নতুন জেল্লা।

০৪. চোখের স্বাস্থ্যঃ

এক কাপ আম কুচি দেহের ২৫% ভিটামিন এ এর অভাব পূরণ করে। নিশ্চয়ই জানেন ভিটামিন এ চোখ ভালো রাখতে কতটা জ়রুরী, আর বুঝতেই পারছেন আম এক্ষেত্রে কতটা সাহায্য করে।

০৫. অ্যালকালী পদার্থ সংরক্ষণঃ

আমের টারটারিক এসিড, মেলিক এসিড এবং বিবুল পরিমাণে সাইট্রিক এসিড দেহের অ্যালকালী জাতীয় পদার্থ সংরক্ষণে অংশ নেয়।

০৬. ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেঃ

আম রক্তে ইন্সুলিনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। সেজন্য আগের কালের নিয়ম অনুযায়ী কিছু পাতা পানিতে সেদ্ধ করে সারারাত ওভাবে রেখে দিয়ে সকালে ছেঁকে সে পানি পান করুন। আমে রয়েছে তুলনামূলক কম গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স (৪১-৬০), যা রক্তে সুগারের ভারসাম্য বজায় রাখে।

০৭. ভিটামিন ইঃ

আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই। ভিটামিন ই দেহের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া ভিটামিন ই দেহের গোপন অঙ্গ সমূহের খেয়াল রাখে নিবিড়ভাবে।

০৮. হজমে সহায়তাঃ

আম হচ্ছে অনেক এনজাইম পূর্ণ একটি ফল। এনজাইম প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে। আমের আঁশের স্বাস্থ্যকর গুনাগুণ হজমে ও পরিপাকে সহায়তা করে থাকে।

০৯. হিট স্ট্রোক মোকাবেলায়ঃ

তীব্র গরমে এক গ্লাস কাঁচা আমের জুস আপনাকে বাঁচাতে পারে হিট স্ট্রোক থেকে। আয়ুর্বেদিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে রোদের প্রচন্ড তাপে দেহের জীবনীশক্তি ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে মাংস পেশী নিস্তেজ হয়ে শরীরকে চলচল অযোগ্য করে তোলে। তখন কাঁচা আমের রস, পানি ও চিনি বা গুড়ের মিশ্রণে তৈরী পানীয় আপনার জীবন বাঁচাতে এবং হিট স্ট্রোক মোকাবেলায় অদ্বিতীয়।

১০. ইমিউন সিস্টেমঃ

আমে আছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ আর সেই সাথে ২৫ টির-ও বেশি রকমের ক্যারোটিনয়েডস। যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে রাখে সুস্থ্য।

১১. পুষ্টিগুণঃ

প্রতি ২২৫ গ্রাম আমে রয়েছে নিম্নোক্ত পুষ্টি উপাদান; যা প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট।

- ১০৫ ক্যালরি,

- ৭৬% ভিটামিন সি,

- ২৫% ভিটামিন এ,

- ১১% ভিটামিন বি৬ প্লাস এবং অন্যান্য ভিটামিন বি,

- ৯% স্বাস্থ্যকর প্রো-বায়োটিক ফাইবার,

- ৯% কপার,

- ৭% পটাশিয়াম,

- ৪% ম্যাগনেসিয়াম ।

রূপচর্চায়ঃ

রূপচর্চার ক্ষেত্রে আমের জুড়ি মেলা ভার; চলুন জেনে নেই রুপচর্চায় আমের ভূমিকা -

- প্রতিদিন একটি আম গ্রহণে ভেতর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।

-প্রতিবার খাওয়ার সময় এক টুকরো আম ত্বকে বু্লিয়ে নিন। এতে ত্বকের ডালনেস কমবে আর জেল্লা বাড়বে।

- পাকা আম ব্রণ সারাতেও সাহায্য করে।

- রোদে পোড়া ত্বকে পাকা আমের ক্বাথ ও গুঁড়া দুধ মিশিয়ে ব্যবহার করুন। উজ্জ্বলতা ফিরে পাবেন।

- তাছাড়া ত্বকের দাগে নিয়মিত আমের রস ব্যবহারে দাগ হালকা করতে সাহায্য করে।

আমরা সবাই কম বেশি আম খেতে ভালবাসি, তবে সবাই কি জানতাম আমের এত গুণের কথা? আমের সব গুণ লিখে শেষ-ও করা যাবে না। উপভোগ করুন গ্রীষ্মকাল – আমের মধুতে।

লিখেছেনঃ রোজা স্বর্ণা

ছবিঃ গোইন্ডিয়া.ব্লগস্পট.কম
Previous Post Next Post