রেমি মার্কেজ, নেপলিয়ন সি কিস আর ড্রিম মোর – এ তিনটি হল আমার জীবনে উপহার পাওয়া তিনটি শ্রেষ্ঠ সুগন্ধি । অসাধারণ সুরভি আর অদ্ভূত সুন্দর বোতল- দু’টোই খুব আকর্ষণীয় ! আর সুগন্ধিগুলো ব্যবহারের পরেও বলাই বাহুল্য, একটা অন্যরকম সতেজতা কাজ করে ভেতরে, যার ছাপ পড়ে আমার কাজ-কর্মে এবং পরিবেশেও । কেউ যখন সুগন্ধির খুব প্রশংসা করে, তখন বোঝা যায় সুগন্ধিগুলোর মহিমা !
আসলে সুগন্ধি হল ব্যক্তিত্বেরই একটি অংশ । আপনি সুগন্ধি ব্যবহারের আদব-কায়দা যত ভালো রপ্ত করতে পারবেন, আপনার ব্যক্তিত্বও তত অসাধারণ হয়ে ফুটে উঠবে । আমার মতো অনেকেই হয়তো আছেন, যারা সুগন্ধির খুব বড় ফ্যান । তাদেরকেই বলছি, সুগন্ধি ব্যবহারের আদব-কেতা সঠিকভাবে মেনে চলছেন তো ? সুগন্ধির ভুলভাল ব্যবহারে অন্যের সামনে অস্বস্তিতে পড়ছেন নাতো আবার ?
সুগন্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা এড়াতে আয়ত্ব করে নিন তাহলে নিচের বিষয়গুলোঃ
০১. নিজের পছন্দেই চলুন
আপনি ব্যক্তিজীবনে যেমন আছেন, সুগন্ধি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সেরকমই প্রাধান্য দিন । যেকোনো সময় ও অভিজ্ঞতায় আপনি আসলে কেমন এবং কী ভালবাসেন, এটা জানা থাকলে মনে আনন্দের সঞ্চার ঘটে । সুগন্ধি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয় । নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আপনি কি সতেজতা ও নির্মলতা ভালবাসেন ?” “আপনি কি মিষ্টি অথবা ফুলেল কোনকিছু ভালবাসেন ?” “আপনি কি তীব্র ও ঝাঁঝালো কিছুকে ভালবাসেন ?” তাহলে এমন কোন সুগন্ধির ব্র্যান্ডকে বেছে নিন, যা আপনার ব্যক্তিত্বকে জাগিয়ে তুলবে এবং আপনার আশেপাশে থাকা মানুষজনও তার আঁচ পাবে । শুধুমাত্র উপহার হিসেবে পেয়েছেন বলে অথবা বন্ধুকে দেখে উৎসাহিত হয়েই একটি ব্র্যান্ড হুট করে কিনে ফেলবেন না । নিজে যেটা ব্যবহার করে তৃপ্তি পাবেন বলে মনে করেন, সেটিই বেছে নিন ।
০২. নিজের ওপর পরীক্ষা করুন
সুগন্ধির সর্বশেষ উপাদান হল দৈহিক রসায়ন । অন্য কারো দেহে যে গন্ধ ভাল লাগে, আপনার দেহে তা নাও লাগতে পারে, এমনকি সে আপনার মা কিংবা বোন হলেও । আমাদের প্রত্যেকের দেহই আলাদা আলাদা রসায়নে তৈরি । আর ঠিক সে কারণেই বিশেষ একটি সুগন্ধি অন্যের দেহে যেভাবে কাজ করে, আপনার দেহে তা সেভাবে করবে না । কাজেই সুগন্ধি কেনার আগে নিজের ত্বকের ওপর পরীক্ষা করুন । অন্তত ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন ফলাফলের জন্যে । ২০ মিনিটের চেয়ে বেশি সময় না লাগলে এটিই আপনার জন্যে পারফেক্ট সুগন্ধি !
০৩. চুলে সুগন্ধি লাগাবেন না
সুগন্ধি বিশেষজ্ঞ সারাহ হরোউইটযের মতে, “অনেক সুগন্ধি ব্যবহারকারীরাই চুলে সুগন্ধি মাখেন দীর্ঘসময় ধরে সুগন্ধ পাবার জন্য । এটি করবেন না ! কারণ, বাজারের বেশিরভাগ সুগন্ধিতেই অ্যালকোহল থাকে, আর অ্যালকোহল চুলকে শুষ্ক করে তোলে । যদিও চুল আমাদের ত্বকের তুলনায় সুগন্ধি ভাল ধরে রাখতে পারে । কারণ, দৈহিক তাপের কারণে সুগন্ধি আমাদের ত্বকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না । যদি আপনি চুল থেকেও আপনার প্রিয় সুগন্ধির মতো সৌরভ পেতে চান, তাহলে চুলে ভাল করে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং করে নিন। এরপর দু’হাতে সুগন্ধি মেখে তালি দিন, যাতে অ্যালকোহলটুকু হাতের তাপে পুড়ে উধাও হয়ে যায় । এরপর চুলের ভেতর আঙ্গুল চালিয়ে দিন !”
০৪. সুগন্ধি কাপড়ে লাগাবেন না
আমরা সাধারণত জামা-কাপড়ের ওপরেই সুগন্ধি লাগিয়ে নিই । আসলে কিন্তু এতে কোন লাভই নেই ! কারণ, একটু পরই এ গন্ধ মিলিয়ে যায়, তা সে যত বিখ্যাত ব্র্যান্ডেরই হোক না কেন । সুগন্ধি মাখার নিয়ম হল, আপনার চারপাশে স্প্রে করে কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকুন, সুরভি আপনার গায়ে মেখে থাকবে । আর তাছাড়া হাতের কবজি, কানের লতি ও ঘাড়েও একটু স্প্রে করে নিতে পারেন । তাহলে গন্ধটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় ।
০৫. প্রলেপ দিন
দিনভর সুগন্ধ ধরে রাখার সবচেয়ে ভাল উপায় হল প্রলেপন । অর্থাৎ, গোসলে সুগন্ধি বডি-ওয়াশ ব্যবহার করুন, বডি-লোশান অথবা বডি-অয়েল দিন সৌরভ আরেকটু বাড়ানোর জন্য ও সেই সাথে আর্দ্রতার জন্য । এরপর আপনার পালস-পয়েন্টগুলোতেও একটু বডি-অয়েল মাখান এবং ফিনিশিং টাচ হিসেবে সুগন্ধি লাগিয়ে নিন । ব্যস, সারাদিনের জন্য আপনি সতেজ, সুরভিত !
০৬. অতিরিক্ত সুগন্ধি মাখবেন না
অতিরক্ত সুগন্ধি মাখার অভ্যাস থেকে থাকলে তা এখনই পরিত্যাগ করুন । কারণ, আপনার সুগন্ধির ঝাঁঝ অন্যের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালে তা আপনার ব্যক্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর ।
০৭. বদলে নিন
আপনি হয়তো সবসময় একই ধরণের সুগন্ধি ব্যবহার করে অভ্যস্ত অথবা আপনার ড্রেসিং টেবিল হয়তো ভরে আছে নানা ধাঁচের সুগন্ধি দিয়ে । যেটাই হোক, এটা খুবই মজার একটি বিষয় এবং এর মাধ্যমেই প্রতিফলন ঘটছে আপনার ব্যক্তিত্বের, আপনার মুডের । সারাহ হরোউইটয পরামর্শ দিয়েছেন হালকা গন্ধের সুগন্ধিগুলোকে দিনের বেলায় এবং কড়া ও ঝাঁঝালো সুগন্ধি রাতে ব্যবহার করতে । অথবা বদলে নিতে পারেন ঋতু ও আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথেও । কারণ আপনার সুগন্ধি হল আত্ম-প্রকাশের সবচেয়ে শক্তিশালী ও স্মরণীয় মাধ্যম । মুড বুঝে সুগন্ধি ব্যবহার করুন এবং ফলাফলটিও উপভোগ করুন !
আপনার পছন্দের সুগন্ধির ব্র্যান্ড তাহলে কোনটি ? শেয়ার করুন আমাদের সাথে !
লিখেছেনঃ নুজহাত